মেরিলিন মনরো—এই নামটি শুনলেই অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে হলিউডের সোনালী যুগের প্রতীক। উজ্জ্বল স্বর্ণকেশী চুল, মধুর হাসি, এবং তার অভিনয়ের ধরণ মনরোকে পরিণত করেছে এক অনন্য রূপকথার চরিত্রে। তার জীবনযাত্রা এবং চলচ্চিত্রের প্রতিটি মুহূর্ত এখনও কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে। যুগে যুগে পর্দায় মেরিলিন মনরোকে নিয়ে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্র ও টিভি শো তার এই অসাধারণ জীবনের দিকগুলোকে বারবার তুলে ধরেছে।
মেরিলিন মনরো: সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মেরিলিন মনরো, আসল নাম নরমা জিন মর্টেনসন, জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৬ সালের ১ জুন। শিশু বয়সে অসংখ্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও, তিনি হয়ে উঠেছিলেন ১৯৫০-এর দশকের অন্যতম বিখ্যাত চলচ্চিত্র তারকা। তার অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে “জেন্টলম্যান প্রেফার ব্লন্ডস” (১৯৫৩), “হাউ টু ম্যারি আ মিলিয়নেয়ার” (১৯৫৩), এবং “সাম লাইক ইট হট” (১৯৫৯)। মনরোর অসাধারণ সৌন্দর্য এবং স্বতন্ত্র অভিনয়শৈলী তাকে অমর করে তুলেছে।
পরবর্তী প্রজন্মে মেরিলিন মনরো
মেরিলিন মনরোর মৃত্যু ১৯৬২ সালে হলেও, তার জীবনের গল্প, বিশেষত তার জটিল ব্যক্তিগত জীবন এবং চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার, পরবর্তী দশকগুলোতে বিভিন্ন সময়ে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে উপস্থাপিত হয়েছে।
“মেরিলিন: দ্য আনটোল্ড স্টোরি” (১৯৮০)
এই টিভি চলচ্চিত্রটি মনরোর জীবনের বিষাদময় অধ্যায়গুলোকে তুলে ধরেছে। মনরোর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ক্যাথরিন হিক্স। চলচ্চিত্রটি তার জীবনের অনেক অজানা ঘটনা এবং অন্তরালের দুঃখ-কষ্টকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছে।
“নরমা জিন এবং মেরিলিন” (১৯৯৬)
এই টিভি মুভিটিতে মেরিলিনের জীবনের দুই দিক দেখানো হয়েছিল। নরমা জিন এবং মেরিলিনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অ্যাশলে জাড এবং মিরা সোরভিনো। এটি দেখায় কিভাবে এক সাধারণ মেয়ে নরমা জিন পরিণত হলেন বিশ্বখ্যাত মেরিলিন মনরোতে এবং সেই সাথে তার ভেতরের দ্বন্দ্বগুলোও।
“মাই উইক উইথ মেরিলিন” (২০১১)
২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রে মেরিলিনের চরিত্রে অভিনয় করেন মিশেল উইলিয়ামস। এই চলচ্চিত্রটি মূলত মনরোর জীবনের এক সংক্ষিপ্ত অধ্যায় নিয়ে নির্মিত, যেখানে মনরো এবং তরুণ সহকারী কলিন ক্লার্কের সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।
“ব্লন্ড” (২০২২)
এই সিনেমাটি জয়েস ক্যারল ওটসের উপন্যাস “ব্লন্ড” অবলম্বনে নির্মিত, যেখানে মেরিলিনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনা দে আরমাস। এটি একটি কাল্পনিক গল্প যা মনরোর জীবনের বিভিন্ন দিক এবং তার মানসিক সংগ্রামগুলোকে চিত্রিত করে।
মনরোর প্রতিচ্ছবি: পর্দার বাইরের প্রভাব
মেরিলিন মনরোর প্রভাব শুধু তার চলচ্চিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তার ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন, এবং জীবনযাত্রা আজও প্রভাবিত করে যাচ্ছে আধুনিক সংস্কৃতিকে। তার কস্টিউম, হেয়ারস্টাইল এবং “ডাম্ব ব্লন্ড” চরিত্রের মাধ্যমে তিনি যা উপস্থাপন করেছেন তা এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে পুনরায় উপস্থাপিত হচ্ছে।
যুগে যুগে পর্দায় মেরিলিন মনরোর উপস্থাপনা প্রমাণ করে, তিনি শুধুমাত্র একটি নামই নন, বরং হলিউডের একটি যুগের প্রতীক। তার জীবন এবং চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার এখনও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং গবেষণার বিষয় হয়ে উঠছে। মেরিলিন মনরোর জীবন ছিল জটিল, আকর্ষণীয়, এবং অনেক ক্ষেত্রে দুঃখময়। কিন্তু পর্দায় তার প্রতিচ্ছবি তাকে অমর করে রেখেছে।